মাদক উৎপাদক দেশ না হলেও বছরের পর বছর ধরে পাচারের রুট হিসেবে বাংলাদেশকে ব্যবহার করে আসছে আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান চক্র। এবার তাদের রুখতে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সার্বক্ষণিক ডগ স্কোয়াড দিয়ে তল্লাশি করতে চায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। প্রশিক্ষিত মাদক বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে সেই স্কোয়াড। ডিএনসির পক্ষ থেকে পাঠানো এমন একটি প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও।
ডিএনসি সূত্র জানায়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মাদক বিশেষজ্ঞদের নেতৃত্বে ১৮ সদস্য শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভেতরে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করবে। তিন শিফটে ছয়জন করে সার্বক্ষণিক পরিচালিত হবে ডগ স্কোয়াড। ধীরে ধীরে অন্য বন্দরগুলোতেও এ ব্যবস্থা নিতে চায় ডিএনসি কর্তৃপক্ষ। সংস্থার একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, শাহজালাল বিমানবন্দরে বিশেষজ্ঞ কর্মীসহ ডগ স্কোয়াড মোতায়েন হলে আন্তর্জাতিক মাদক চক্রের সদস্যদের ধরা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশে মাদক উৎপাদন না হলেও গোল্ডেন ট্রাঙ্গেল (থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও লাউস) এবং গোল্ডেন ক্রিসেন্টের (আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ইরান) কাছাকাছি হওয়ায় চোরাচালানের রুট হিসেবে ব্যবহার হয়। কোকেনের আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে আগে থেকেই এ দেশকে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় বাংলাদেশে এর গ্রাহক নেই বললেই চলে। এর পর আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে ক্রেজি ড্রাগ ইয়াবার চোরাচালান শুরু হয়। সর্বশেষ এ রুটের তালিকায় যুক্ত হয়েছে আইস বা ক্রিস্টাল মেথ।
গত ৯ সেপ্টেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমাবন্দরের রপ্তানি কার্গো ভিলেজ থেকে ১৫ কেজি ৬৫৪ গ্রাম এমফিটামিন পাউডার জব্দ করা হয়। ইয়াবা তৈরির মূল উপাদান এই এমফিটামিন। গত বছরের ১০ নভেম্বর ঢাকা থেকে যাওয়া একটি ফ্লাইটে ১০টি কার্টনে থাকা ইয়াবা তৈরির কাঁচামাল সিউডোফিড্রিন ধরা পড়ে মালয়েশিয়ায়। বাংলাদেশ হয়ে মাদকের কাঁচামালের ওই চালানটি সেখানে গেলেও সেটি ধরতে পারেনি হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর এভিয়েশন সিকিউরিটি কর্তৃপক্ষ। তবে গত ১৬ অক্টোবর তৈরি পোশাকের একটি চালানের আড়ালে পাচারকালে ৩৯ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করতে সক্ষম হয় এভিয়েশন সিকিউরিটি ফোর্স (এভসেক)। সাউদিয়া কার্গো এয়ারের একটি ফ্লাইটে চালানটি যাচ্ছিল সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ডিএনসি কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডগ স্কোয়াডের বিষয়ে নিজেদের সক্ষমতা নিয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে কাজ শুরু করবে ডিএনসি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংস্থার উপপরিচালক মানজুরুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, ‘শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ডগ স্কোয়াড মোতায়েনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আমরা একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছি।’ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন্স অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স) কুসুম দেওয়ান আমাদের সময়কে বলেন, ‘ডগ স্কোয়াড মোতায়েনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।’
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএস তৌহিদ উল আহসান আমাদের সময়কে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দিলে তারা (ডিএনসি) তল্লাশি করতে পারবে। তখন যাচাই-বাছাই আরও ভালো হবে। তবে বিমানবন্দরের ভেতরে কাজ করতে হলে আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইকাউ) থেকে পরিদর্শনে আসে। তাদের অনুমোদন লাগে। এ ক্ষেত্রে তারা বাইরে কাজ করতে পারে।’
Leave a Reply